জহুরুল ইসলাম জুয়েলঃ
বর্তমানে দেশের রাজনীতি জটিল সমীকরণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা বুঝে ওঠা সহজসাধ্য ব্যপার নয়। সর্বত্রই উদ্বিগ্নতা, উৎকন্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মও বেশ উদ্বিগ্ন। দেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, দেশের পরিস্থিতি কেমন হবে, সামনে কেমন নেতৃত্ব আসতে যাচ্ছে ইত্যাদি নানান বিষয় তরুণ মনে উঁকি দিয়ে ওঠে। রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ যেখানে নাগরিক দায়িত্ব, সেখানে ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি রাজনীতি মানেই সন্ত্রাস-অনাচার আর বিশৃঙ্খলা। দিনের পর দিন রাজনীতি সমাজকে পরিবর্তনের কথা বলে না, বরং যারা বিত্তশালী ও ক্ষমতাশালী তাদের লাভের হিসাব বাড়ায়। এই দেশে ভোটে জিততে হলে সেই সমীকরণ নির্ধারিত হয় বিত্তশালীদের কালো টাকা আর অস্ত্রের জোরে। তরুণ সমাজের যে অংশটা সমাজকে বদলাতে চায়, তারা রাজনীতিতে আসতে চায় না। আর রাজনীতিবিমুখ থেকে সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তন যেহেতু সম্ভব না, তাই তাদের অন্য সকল স্বতন্ত্র চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে না। এই রকম পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয় হতাশার। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দেশের রাজনীতি নিয়ে তরুণ প্রজন্ম আশা করে নিশ্চয়ই পরিবর্তন সন্নিকটে, অন্ধকার শেষে আলো আসবেই।
আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব মূলত তরুণ প্রজন্মের হাতেই। তারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দেশে বর্তমানে নতুন করে মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন তরুণ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ হিসেবে বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসেবে পাঁচ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন। প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখ তরুণ ভোটার তালিকায় যোগ হচ্ছে। ঈশ্বরদী উপজেলাতে বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ২৭৩০৫০ জন। আর আটঘরিয়াতে ১৩৬৮০৮ জন। সে হিসেবে পাবনা-৪ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪০৯৮৫৮ জন। এদের সিংহভাগই তরুণ ভোটার, যারা নির্ধারণ করবে এই জনপদের আগামীর কান্ডারীকে।
পাবনা-৪ আসনের রাজনীতি সচেতন নিবেদিত প্রাণ তরুণ-যুবারা যখন দেখতে পায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে, লুটপাট আর দখলদারিত্বের নিকৃষ্ট আর অশুভ প্র্যাকটিস বজায় রাখতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে খুনি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী আর মাদক সেবনকারীদের বিভিন্ন পদে জায়গা করে দিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার ক্ষতি সাধন করছে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা আশাহত হয়ে পড়ে, রাজনীতির প্রতি অনীহা জাগে। তবে লুটেরা রাজনীতির চিরচেনা গলিতে হাঁটতে গিয়ে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার রাজনীতি সচেতন তরুণ প্রজন্ম এক ভিন্ন ধারার ভিন্ন মানবের সন্ধান পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এ সমৃদ্ধ জনপদের তরুণ প্রজন্ম চায় তাদের অঞ্চলকে তারা তাদের মত করে গড়ে তুলবে, রাজনীতিকে সকল প্রকার জঞ্জাল আর কলুষতার কবল থেকে মুক্ত করে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। যেখানে থাকবে না কোনো মাদকের ছড়াছড়ি, থাকবে না কোনো লুটেরা রাজনৈতিক নেতার লুটপাটের ছড়াছড়ি, যেখানে থাকবে না কোনো দুর্নীতি, অপশাসন। তারা এমন এক নেতাকে চায় যিনি লুটপাট নয় উন্নয়ন চায়, সমৃদ্ধি আর সুশাসন চায়, মাদকের ছড়াছড়ি নয় চায় সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর, সমৃদ্ধ সমাজ। আর তরুণ প্রাণের এ আকুতি পূরণে পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে এক পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের, ক্যারিস্ম্যাটিক লিডারের। যিনি সত্যিকার অর্থেই সুন্দর, সমৃদ্ধ রাজনীতির ধারা বিনির্মাণে অবদান রাখতে চায়। তিনি হলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতোভাবে যুক্ত থাকার সুবাদে ঈশ্বরদী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে চলা ফেরা করার বা তাদের সম্বন্ধে গভীর ভাবে জানার সুযোগ হয়েছে। বর্তমান রাজনীতিকদের বৃহৎ অংশই আজ বিভিন্ন ভাবে করাপ্টেড বা সুবিধাবাদী মন-মানসিকতা পোষণ করে। সে দিক দিয়ে এই মানুষটি একেবারেই ভিন্ন। বেশ কিছু বছর আগে যেদিন উনার সাথে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার রাজনীতি নিয়ে আলাপ হয়, এ অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর চিন্তা-চেতনার বিষয়ে জানার সুযোগ হয় সেদিনই বুঝেছিলাম এতোদিনে এই ঐতিহ্যবাহী জনপদ তার সুযোগ্য কান্ডারীর সন্ধান পেয়েছে। তারপর থেকে যত বার উনার সাথে দেখা হয়েছে, ততোবারই উনার প্রতি ভালোলাগা আর শ্রদ্ধাবোধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যখনই কেউ কোনো সমস্যায় পড়েছে, মনে হয়েছে এ সমস্যার সমাধান উনার পক্ষে সম্ভব, জানিয়েছি, সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন বা সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে, মনে পড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবীদের নিয়ে ঈশ্বরদীতে একটা ছোটখাটো তরুণ সম্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল, অবাক হয়েছিলাম অসংখ্য মেধাবীরা সে সম্মিলিনে একত্র হয়েছিল শুধু এটা জেনে যে সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু। এই মানুষটাকে পেয়ে ঈশ্বরদীকে নিয়ে তারা তাদের বিভিন্ন আশার কথা, আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করে, প্রত্যাশা করে এ জনপদ আবারও হয়ত সমৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করবে এই মানুষটির হাত ধরে। তাদের চাওয়া ছিল খুবই সামান্য; তাদের প্রাণের এই জনপদ মাদক, সন্ত্রাস আর অপ-রাজনীতি মুক্ত হবে, রাস্তা-ঘাট চলাচল উপযোগী হবে, ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার ঐতিহ্যবাহী অবকাঠামোগুলোর আধুনিকায়ন হবে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু, স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে, হসপিটালগুলোতে চিকিৎসার সঠিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে, মানুষ তার নূন্যতম মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে আর নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারবে। হয়ত সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন এ জনপদের তরুণ প্রজন্মের আশা আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। প্রতিটি মানুষ তাঁর নাগরিক অধিকারের পরিপূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসী তাঁদের হারানো অতীত ঐতিহ্য আর গৌরব পুনরায় ফিরে পাবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’ তকমা থেকে বেড়িয়ে আজ সমৃদ্ধির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে চলছে। কানাডাভিত্তিক অনলাইন প্রকাশনা ‘ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর আগে আইএমএফ প্রকাশ করেছিল যে বাংলাদেশ ও ভারত একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ, যা ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আইএমএফ পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘দ্য টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জিডিপির হারের দিক থেকেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। সার্বিক দিক দিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্নিবার গতিতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ধারাবাহিক সাফল্যে কালিমা লেপন করে চলছে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত, সন্ত্রাসের মদদদাতা, হাট-ঘাট-মাঠ দখলকারী হায়েনা সদৃশ নেতা নামের দানবেরা। এদের উদ্দেশ্য সুশাসন বা উন্নয়ন নয় এদের উদ্দেশ্য লুটপাট আর অপশাসন, নিজেদের আখের গোছানো। এদের লুটপাট, অপশাসনের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্লিন ইমেজ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং এই লুটপাট তন্ত্রের মূলোৎপাটন করে সুষ্ঠু, সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। এ সমস্ত দিক বিবেচনায় নিয়ে, জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা-৪ আসনের আগামীর নেতৃত্ব সুযোগ্য, বলিষ্ঠ এবং পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরুর হাতেই অর্পণ করবেন বলে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসী মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। তাঁর ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বে আগামীতে এ জনপদ এগিয়ে যাবে উন্নতি ও সমৃদ্ধির শীর্ষ স্তরে। যেখানে প্রতিটি নাগরিক বেড়ে উঠবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে, বসবাস করবে সন্ত্রাস আর হানাহানি মুক্ত, সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে।
লেখক: তরুণ গবেষক ও সাংবাদিক। সাবেক শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।