===================================================================================
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপিদের তথ্য সার্বক্ষণিকভাবে হালনাগাদ করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব সিআইবিতে ঋণখেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট করে ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না মর্মে আদেশ পেয়েছে, ওই সব আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তা বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) মহাব্যবস্থাপক মনছুরা খাতুন বলেন, আগামী নির্বাচনে কোনো ঋণখেলাপিই যাতে প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকেও নিজস্ব সিআইবি হালনাগাদ রাখার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিরা এখন কোনো নির্বাচনেই অংশ নিতে পারে না। সংসদ নির্বাচন সারা দেশে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমাজে ব্যাপকভাবে পরিচিতি আছে এমন বড় বড় প্রার্থীরা অংশ নেন।
এদের অনেকে ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত কারণে খেলাপি হয়ে পড়েন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে এ সময় তারা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করে দেন। ফলে এ সময় খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোও তৎপর থাকে। স্বেচ্ছায় খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করলে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপত্তি তোলে। এর মাধ্যমে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের চেষ্টা করা হয়। প্রার্থী ঋণখেলাপি হলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার সুযোগ আছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো আপাতত তাদের নামে কোনো ঋণ থাকলে সেই ঋণের বর্তমান অবস্থা কী, তা হালনাগাদ করে রাখছে। শাখাগুলো থেকে এসব তথ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংকের সিআইবিতে আসছে।
খেলাপি ঋণ থাকলে সিআইবিতে তা হালনাগাদ হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ নিয়মিত রাখার তাগাদাও দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো সাধারণত তিন মাস পরপর তাদের সিআইবি হালনাগাদ করে। সে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তা হালনাগাদ করে নেয়। তবে এখন ব্যাংকগুলো প্রতি মাসেই সিআইবিতে ঋণ গ্রহীতাদের তথ্য হালনাগাদ করছে। সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককেও পাঠাচ্ছে। এছাড়া বড় বড় গ্রাহকদের ঋণের তথ্য সঙ্গে সঙ্গেই হালনাগাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখনও সিআইবি হালনাগাদ হয়েছে। এর মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। ফলে নির্বাচনে সম্ভাব্য খেলাপি প্রার্থীদের ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর কাছে হালনাগাদ তথ্য কিছুটা রয়েছে। এখন নতুন করে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতি মাসেই সিআইবি হালনাগাদ করছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারেন এসব বিষয়ে আমরা কিছু ধারণা রাখছি। ফলে তাদের ঋণের অবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তৎপরতা বেড়ে যায়। এ সময়ে ব্যাংকগুলো বড় বড় গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে হালনাগাদ করে রাখে। এখন সিআইবির কার্যক্রম অনলাইন হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সাল থেকে ঋণখেলাপিদের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। প্রথমে ছিল শুধু ব্যাংক খাতের ঋণখেলাপি। পরে ২০০৮ সাল থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সিআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রথমে সেটি হাতেকলমে কাজ করলেও এখন কাজ করছে অনলাইনে। বর্তমানে সিআইবিতে সর্বনিম্ন ১ টাকার ঋণের তথ্যও রাখা হচ্ছে। আগে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের তথ্য রাখা হতো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারের কাছে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জোরালোভাবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে তথ্য তুলে ধরা হয় না। ফলে অনেক খেলাপি পার পেয়ে যান।
ব্যাংকের শাখার কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে যদি কোনো ঋণখেলাপি পার পেয়ে যান তবে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাহলে শাখা পর্যায় থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, বড় বড় খেলাপিরা তাদের ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না মর্মে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন। এবার যাতে সেটি না হতে পারে সেজন্য ব্যাংকগুলো আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সোনালী ব্যাংক ইতিমধ্যে একটি বড় গ্রাহকের আদালতের স্থগিতাদেশ আপিলের মাধ্যমে বাতিল করাতে সক্ষম হয়েছে। জনতা ব্যাংকও ক্রিসেন্ট গ্রুপের স্থগিতাদেশ আপিল করে বাতিল করতে সক্ষম হয়েছে।