মেগানিউজ রিপোর্টঃ পাবনায় নাকের পলিপাস অপারেশন করাতে গিয়ে এক প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শহরের ডিজিটাল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি মৃতের স্বজনদের। তাদের দাবি—চিকিৎসকের ভুল অপারেশন ও অজ্ঞানে ত্রুটির কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে চিকিৎসকরা পলাতক রয়েছেন।
মারা যাওয়া প্রকৌশলীর নাম সিরাজুল ইসলাম (৩০)। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের আতিয়ার মণ্ডলের ছেলে।
সিরাজুল হা-মীম স্পিনিং মিলসের প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর দুই বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা ও ভাইবোন রয়েছে।
এ ঘটনায় প্রকৌশলীর স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে।
সিরাজুলের বাবা আতিয়ার মণ্ডল অভিযোগ করেন, তার ছেলে বৃহস্পতিবার বিকেলে নাকের পলিপাসের অপারেশন করাতে পাবনার সদরের ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই তার অপারেশন করেন পাবনা মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা. হারুন অর রশিদ। তার সাহায্যকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যানেস্থেশিয়ান ডা. শামসুল হক। প্রথমে সব ঠিক থাকলেও অপারেশন শুরুর ৩০ মিনিট পর থেকে শুরু হয় জটিলতা। একপর্যায়ে মারা যায় সিরাজুল।
বাবা আতিয়ার মণ্ডলের অভিযোগ, রোগীর মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে পালিয়ে যান চিকিৎসক হারুন অর রশিদ ও শামসুল হক এবং ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা বেশিরভাগ সদস্য। এ অবস্থায় স্বজনরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ডা. মো. হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসক শামসুল হক বলেন, ‘আমি যখন তাঁকে অ্যানেস্থেশিয়া দিই, তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর জ্ঞান ফিরেছিল, সেসময় তাঁর সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। পরে তাঁর মৃত্যু কীভাবে হলো, এটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমাদের কোনো ভুল চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়নি।’
ডা. শামসুল হক আরও বলেন, ‘রোগীর অপারেশনের পর জ্ঞান ফিরলে তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে প্রস্রাব করেন। কাজেই অজ্ঞানকারীর কোনো দোষ নেই।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপককে পাওয়া যায়নি। সহকারী ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও ওটিই ইনচার্জ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কীসের জন্য মারা গেল, আমরা সেটা বলতে পারছি না। এখন কেন মারা গেল, এটা আল্লাহ ছাড়া তো আর কেউ বলতে পারবে না। তবে, তার ফিটনেস রিপোর্ট ভালো ছিল।’
জানতে চাইলে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখব। যেহেতু সেখানে রোগী ও হাসপাতাল দুটি পক্ষ রয়েছে, এখন কেউ যদি লিখিত অভিযোগ না দেয়, তাহলে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অথবা স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এসব ক্লিনিক-হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।