বিশেষ প্রতিবেদনঃ সিদ্দিকুর রহমান ওরফে ময়েজ উদ্দিনের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ‘কুল ময়েজ’ হিসেবে। স্বশিক্ষিত এই চাষি বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে কুলবাগানে ফুলের পরাগায়ন বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে পান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার।
ময়েজ উদ্দিন যে বছর পদক পান, সেই বছর তাঁর খামার দেখতে গিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের তখনকার স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি পরিদর্শন বইয়ে লিখেছিলেন, ‘ময়েজ উদ্দিনের কৃষি খামার পরিদর্শন করে আমি খুবই আনন্দিত। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি এই খামারের আরও উন্নতি কামনা করি। ’
এখন অবশ্য ময়েজ উদ্দিন (৫৪) নিঃস্ব, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজের কেনা কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি ব্যাংকের কাছে বন্ধক। ঋণখেলাপির মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
ময়েজ উদ্দিনের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলায়। ওই উপজেলায় নিঃস্ব হওয়া জাতীয় পদকপ্রাপ্ত চাষিদের মধ্যে আরও রয়েছেন আবদুল জলিল ওরফে কিতাব মণ্ডল, যিনি ‘লিচু কিতাব’ নামে পরিচিত। রয়েছেন জাহিদুল ইসলামও, যিনি পরিচিত ‘গাজর জাহিদ’ নামে। হাবিবুর রহমানের নামটিও আসছে, যাঁর পরিচিতি ‘মাছ হাবিব’ নামে।
পদকপ্রাপ্ত এসব কৃষক নিজেদের চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন। পরে ব্যাংক তাঁদের বড় অঙ্কের ঋণ দেয়। সেই ঋণ নিয়ে চাষাবাদ বাড়িয়ে, খামারে বিনিয়োগ করে তাঁরা বিপাকে পড়েন। তাঁরা নিজেদের সংকটের কারণ হিসেবে ফসলের ভালো দাম না পাওয়া ও ব্যাংকের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন। ফসলের ভালো দাম না পাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও দায়ী করছেন তাঁরা।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কৃষকদের দু-তিন কোটি টাকা ঋণ নেওয়া, সেই ঋণের বিপরীতে গড়া খামার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও প্রশিক্ষণ ছিল কি না, ঝুঁকি নিরসনের ব্যবস্থা ছিল কি না, বিমা সুরক্ষা ছিল কি না—এসবও বিবেচ্য বিষয়। ঈশ্বরদীর পদকপ্রাপ্ত চার কৃষকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের এসব ছিল না।
ঈশ্বরদীতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মোট ১৫ জন চাষি রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, দেশের আর কোনো উপজেলায় পদকজয়ী এত চাষি নেই। স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই চারজন ছাড়া পদকপ্রাপ্ত অন্য চাষিরা ভালোই আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই চাষাবাদ অথবা খামার মাঝারি পর্যায়ে রেখেছেন। বড় ঋণ নেননি। বিপাকে রয়েছেন চারজন। একসময়ের ধনী কৃষক কিতাব মণ্ডল বলছিলেন, ‘আমি একজন সফল লিচুচাষি ছিলাম। আমাকে গরুর খামার করার জন্য ঋণ না দিয়ে মেরে ফেলাই ভালো ছিল।’
ময়েজের বাড়িতে একদিন
ময়েজ উদ্দিনের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। কুল চাষে পরাগায়ন বাড়াতে তিনি যে কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন, সেটি হলো নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রণ।
কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, কুলগাছে স্ত্রী ফুল দেরিতে আসে, তত দিন পুরুষ ফুলটি যৌবন হারাতে বসে। ময়েজ উদ্দিন নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরুষ ফুলের জীবন দীর্ঘায়িত করেন। এতে কুলের পরাগায়ন বেড়ে যায়। ফলন হয় অনেক বেশি। এতে মুনাফা যেমন বাড়ে, তেমনি তিনি পরিচিতি পান। জাতীয় সংসদের স্পিকার ছাড়াও তাঁর বাগান দেখতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা এবং দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা। তিনি জাতীয় ফল পদকও পেয়েছিলেন।
ময়েজ উদ্দিনের বাড়ি গিয়েছিলাম ১৫ অক্টোবর। রাজশাহী থেকে ট্রেনে ঘণ্টা দেড়েক যাওয়ার পর ঈশ্বরদী স্টেশন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে কাঁচা-পাকা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর পাওয়া গেল বাড়িটি। টিনের ছাউনির ঘর, দেয়াল পাকা। কথা বলে জানা গেল, ময়েজ উদ্দিনের চার ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই ছেলে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন, দুই ছেলে পড়াশোনা করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরেক মেয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর স্ত্রী বেলী বেগম (৪০) সবজি চাষে সাফল্যের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার (স্বর্ণপদক) পাওয়া কৃষক (২০১৭)।
ময়েজ উদ্দিন বলেন, একসময় তিনি ধনী কৃষক ছিলেন। তবে বড় ব্যাংকঋণ নিয়ে গরুর খামার করতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। বাড়িতে গরু পালনের অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁর বড় খামার পরিচালনার প্রশিক্ষণ ছিল না।
ময়েজ উদ্দিনকে প্রথম বড় ঋণ দেয় বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক; পরিমাণ পৌনে দুই কোটি টাকা। ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক তাঁকে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়। ঋণের টাকা দিয়ে তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দেনা শোধ করেন এবং একটি গরুর খামার করেন, যেখানে গরু ছিল ২৭৫টি। পাশাপাশি ৪০০ বিঘা জমিতে কুল, সবজি ও ধনেপাতা আবাদ করেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের ঋণের খেলাপি হতে শুরু করেন ২০১২ সালের শুরু থেকে। ২০১৩ সালের আগস্টে ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। এখন ব্যাংকের ঋণ সুদাসলে ছয় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাঁর জমি, বাড়িঘর ও খামার নিলামে উঠেছিল। তবে ক্রেতা না থাকায় সে দফা বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংক। গরুর খামার, মুরগির খামার ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট খালি পড়ে রয়েছে।
ময়েজ উদ্দিন বলেন, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে হরতাল ও অবরোধের কারণে তিনি উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাননি। খেলাপি হওয়ার পর তিনি ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক তা গ্রহণ করেনি।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, ময়েজ উদ্দিন ঋণ নিয়ে তার যথাযথ ব্যবহার করেননি। এখন সুদ মওকুফ করে দিলেও তাঁর কাছ থেকে ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
অবশ্য ব্যাংকাররা জানান, গ্রাহক ঋণ নিয়ে কী করছেন, সেটা দেখাও ব্যাংকের কাজ। ব্যাংকাররা আরও বলেন, কোনো ঋণ খেলাপি হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা নিয়ে তা ব্যাংকগুলো পুনঃ তফসিল করতে পারে। একটি ঋণ চারবার পর্যন্ত পুনঃ তফসিল করা যায়, তবে প্রভাবশালীরা এর চেয়ে বেশি সুবিধা পান। বড় ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের সুদ মওকুফেরও সুযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৩ হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে ব্যাংকগুলো।
ময়েজ উদ্দিনের খামার পরিদর্শন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকে সেখানকার পদকপ্রাপ্ত কৃষকদের দুরবস্থার কথা জানালে তিনি বলেন, ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যতটা সুবিধা পান, কৃষকেরা সেটা পান না। কারণ, কৃষকেরা সংগঠিত নন। তিনি আরও বলেন, কিছু চলতি মূলধন পেলেই কৃষকেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। তাঁদের জন্য এখনো ভাবার সুযোগ আছে।
লিচুচাষির বাগান এখন নিলামে
ময়েজ উদ্দিনের মতোই অবস্থা ২০০৯ সালে জাতীয় ফল পদক পাওয়া লিচুচাষি আবদুল জলিল ওরফে কিতাব মণ্ডলের (৫৪)। ঈশ্বরদী উপজেলার মীরকামারী গ্রামের এই কৃষক ঈশ্বরদীর শুরুর দিকের লিচুচাষিদের একজন। এখন ঈশ্বরদী লিচুর জন্য বিখ্যাত। তবে তাঁর লিচুবাগান নিলামে উঠেছে।
কিতাবের ভাষ্য, ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক তাঁকে ২০০ গরুর খামারের জন্য প্রকল্প ঋণ নিতে উৎসাহ দেয়। তিনি সে অনুযায়ী খামার করার পর ব্যাংক শেষ পর্যন্ত ঋণ দেয় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। তা-ও কিস্তিতে, দেরি করে। এর মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেওয়ার পর যে সময়টুকু কিস্তি দিতে হয় না) শেষ হয়ে যায়। তখন ব্যাংক কিস্তি দাবি করে।
কিতাব মণ্ডল বলেন, ‘আমি খামারে শেড (ছাউনি) করলাম ২০০ গরুর জন্য ১২ হাজার বর্গফুটের। পরে ঋণ অনুমোদন হয় ১০০ গরুর জন্য দেড় কোটি টাকা, যেখানে শেড দরকার ছিল মাত্র ৫ হাজার বর্গফুটের; যদিও ঋণ পেলাম মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। ব্যাংক আমাকে গরু কেনা ও চলতি মূলধন হিসেবে তেমন কোনো টাকাই দিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার আগে ব্যাংকে বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা সিসি (ক্যাশ ক্রেডিট বা নগদ ঋণ) ঋণ থাকত। যথাসময়ে পরিশোধ করতাম। কিন্তু প্রকল্প ঋণের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।’
ব্যাংকের টাকা না পেয়ে ধারকর্জ করে ৫০টি গরু কিনেছিলেন দাবি করে কিতাব মণ্ডল বলেন, ৩০টি গরু দুধ দিত। ২০১৪ সালের হরতাল-অবরোধে দুধ বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। গরুর খাবার জোগাড় করাই কঠিন, ঋণের কিস্তি দেবেন কীভাবে। ২০১৫ সালে ব্যাংক মামলা করে দেয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন সুদাসল আড়াই কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের দিকে বকেয়া অর্থের ২ শতাংশ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য আবেদন করেছিলেন জানিয়ে কিতাব মণ্ডল বলেন, তাঁর ঋণ পুনঃ তফসিল করেনি ব্যাংক।
কিতাব মণ্ডলের ১০ বিঘার লিচুবাগানটি ১০ অক্টোবর নিলামে তোলার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। কিতাব বলেন, তিনি এখন কিছু কৃষিকাজ করে এবং ভাইবোনদের সহায়তায় চলছেন।
জাহিদুলের বিরুদ্ধে আট মামলা
ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান। গাজর চাষের মুনাফা থেকে তিনি ৩০ বিঘা জমি কেনেন। সেই জমিতে গরুর খামার করেন। খামারে ১৭৫টি গরু ছিল। এ জন্য ২০১২ সালে তিনি ব্যাংকঋণ নেন ৫ কোটি টাকা।
জাহিদুল বলেন, দুধের ভালো দাম না পাওয়ায় খামার থেকে আয় করে ঋণ শোধ করতে পারেননি। ঋণখেলাপি হওয়া ও চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ব্যাংক মোট আটটি মামলা করেছে। এখন সব ফেলে ঢাকায় মামলার হাজিরা দিতেই জীবন শেষ। গত ২৫ জুলাই একটি মামলায় জামিন নিয়েছেন।
ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গ্রামের হাবিবুর রহমানের (৫৬) বাড়িঘর, খামার—সব নিলামে উঠেছে। তাঁর নামে ১১টি মামলা চলমান। তিনি জানান, ২০১০ সালে তিনি জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ও ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান। তাঁর খামারে ২০০ গরু ছিল, ৫০ বিঘা আয়তনের পুকুরে মাছ ও ৫ হাজার মুরগি ছিল। ২০১২ সালে এসে ঋণে জড়িয়ে পড়েন।
হাবিব বলেন, অ্যানথ্রাক্সে ২৫টি গরুর মৃত্যু এবং দুধ ও মাছের ভালো দাম না পাওয়ায় তিনি খেলাপি হন। ২০২১ সালে ব্যাংক মামলা করে দেয়।
জাহিদুল ও হাবিবুরের ঋণ ব্যাংক পুনঃ তফসিল করেছিল। তবে তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারেননি। একসময়ের এই সেরা চাষিরা যে ঋণগ্রস্ত, তা জানে কৃষি বিভাগও। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এখানে এসেই শুনেছেন, এখানকার জাতীয় পর্যায়ের পদক পাওয়া কয়েকজন চাষি ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসে গেছেন। তবে এই কৃষকদের ঋণের ব্যাপারে তাঁর অবস্থান থেকে কিছু করার সুযোগ নেই।
সুবিধা ‘শুধু’ প্রভাবশালীদের
অর্থনীতিবিদ ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের কৃষকদের এখন বড় ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ব্যবসার সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজ হলো ঋণ বিতরণ করা। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ তাদের নেই। তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে খাতটি সম্ভাবনাময় কি না, উদ্যোক্তার সামর্থ্য আছে কি না, সেটা দেখার কথা। গবাদিপশুর খামারের ক্ষেত্রে সফলতার গল্প যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে উদ্যোক্তার ব্যবসা চলমান আছে, তাঁর ঋণ পুনঃ তফসিল করা যায়। কিন্তু যাঁর ব্যবসা নেই, তাঁর ঋণ পুনঃ তফসিল করে তো ফল পাওয়া যায় না।
অবশ্য অর্থনীতিবিদদের আরেকটি মত হলো, একজন কৃষক যখন কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক খামার করেন, তখন তাঁর প্রশিক্ষণ, বিমা সুরক্ষা এবং বাজারে দাম পড়ে গেলে কাঁচামাল সংরক্ষণ বা বিকল্প পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকতে হয়। সেটা যদি বাণিজ্যিক ব্যাংক না করতে পারে, তাহলে অন্য কোনো ব্যবস্থা থাকা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে কৃষকদের কাছে শুধু বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁদের কাছে প্রশিক্ষণ, বিমা ও বাজারসুবিধা পৌঁছাচ্ছে না। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো (জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি) কিন্তু কৃষকদের কাছে ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার পুরো সমাধানের প্যাকেজ নিয়ে যায়।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো প্রভাবশালীদের সুবিধা দেয়, তাঁদের জন্য আইনও বদলানো হয়। বিপরীতে ব্যাংক কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে বেড়ায়।