। । . ওমর হায়দার সাহেদ .। ।
সড়ক দুর্ঘটনা আজকাল আমাদের দেশে নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই, অনলাইনে চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার মতো ভয়াবহ খবর। অথচ আমরা একটু সতর্ক হলেই দুর্ঘটনার মতো অস্বাভাবিক মৃত্যুকে এড়াতে পারি। সাধারণত আমাদের দেশে দুর্ঘটনাগুলো নিয়মিত কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে।
এক শ্রেণির অসৎ মালিক লোভের মোহে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামিয়ে টাকা আয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে, অনভিজ্ঞ ড্রাইভারদের হাতে চাবি তুলে দিচ্ছে। ড্রাইভারদের প্রতিযোগিতামূলক মন- মানসিকতা এবং অনেক সময় অতিরিক্ত আয়ের লোভে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী বহনও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া জনসাধারণের রাস্তা পারাপারে অসতর্কতা ও অজ্ঞতাও দুর্ঘটনার আর একটি কারণ। আমরা যদি এ বিষয়গুলোর দিকে একটু নজর দিই তাহলে অনেকাংশে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। দুর্ঘটনা রোধকল্পে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে।যেমন:উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, রাস্তাঘাট সংস্কার, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধকরণ, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নয়ন। পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পরিবহন আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্ঘটনা রোধকল্পে মিডিয়ায় প্রচার অভিযান চালিয়ে আমরা সকলের মধ্যে এ রকম মানসিকতা গড়ে তুলতে পারি যে, দুর্ঘটনা আসলে দৈব কোনো কিছু নয়।
পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য এবং অরাজকতা" বন্ধ করতে হলে নিম্নে উল্লেখিত পদক্ষেপ সমূহ সরকার বিবেচনায় নিতে পারেনঃ
১. গাড়ির ফিটনেস নিশ্চিত করুন। ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে শুণ্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন;
২. চালক নিয়োগ প্রক্রিয়া মালিকের পরিবর্তে বিআরটিএ কর্তৃক নিশ্চিত করুন এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে ধুমপায়ী ও মাদকসেবীদের নিরুতসাহিত করুন
৩. সকল গণপরিবহনকে সংখ্যানুপাতে কয়েকটি কোম্পানি/সমিতি ভূক্ত করুন, যাতে করে দিনশেষে সকল গাড়ি সমান টাকা পায়। এতে করে চালকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতা/ওভারটেকিং থেকে সরে আসবে;
৪. চালকের বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিত করুন এবং নিয়মিত মনিটরিং করুন। অবৈধ লাইসেন্স প্রদানের সাথে যুক্ত বিআরটিএ'র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মীদের প্রয়োজনে ছাটাই করে স্বচ্ছ ও মেধাবীদের নিয়োগ দিন;
৫. চালকের ছবি সম্বলিত লাইসেন্সের কপি ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং বিআরটিএ'র হটলাইন নম্বর গাড়ীতে দৃশ্যমানপুর্বক প্রদর্শন করুন, যাতে করে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায়;
৬. গাড়ি চলাকালীন চালকদের ধুমপান ও মোবাইল ফোনে কথা নিষিদ্ধ করুন এবং প্রতি ৬মাস পরপর চালকের শারিরীক ও মানসিক সক্ষমতা নির্ণয়ে মেডিকেল চেকআপ নিশ্চিত করুন;
৭. গাড়ীতে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন এবং নির্দিষ্ট ষ্টপেজে যাত্রী উঠানামা নিশ্চিত করুন এবং যাত্রী ছাউনি ও রাস্তা দখলমুক্ত করুন;
৮. নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত শ্রমিক ফেডারেশন ভেঙ্গে দিন এবং তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের দৌরাত্ম্য কমাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিকতর ক্ষমতা প্রদান করুন এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনুন;
৯. চালকদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীসেবা ও আচরণগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করুন;
১০. হাইওয়ে/প্রধান সড়কে রিক্সা চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ করতে হবে এবং ফুট ওভার ব্যবহার নিশ্চিতে ট্রাফিক পুলিশকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে;
১১. সর্বোপরি পুরো পরিবহন সেক্টর প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত করুন। আশা করা যায় সকল মালিক, চালক, শ্রমিকের নৈরাজ্য বন্ধ হবে এবং এ সেক্টরে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।