বিশেষ প্রতিবেদনঃ ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কিছুতেই থামছেনা পুলিশের চাঁদাবাজী। যানবাহনের ফিটনেসজনিত ত্রুটি, কাগজে সমস্যাসহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর সব কারন দেখিয়ে চালকদের হয়রানীর মাধ্যমে উপরি আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা। তাদের হেয়ালিপনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যানজটসহ প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এত কিছুর পরও হাইওয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরবতা নিয়ে সংশয়ে ভুক্তভোগী মুক্তিকামী জনসাধারণ।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, এলাকার ফুটপাতে বিভিন্ন অবৈধ দোকান, যান্ত্রিক ত্রুটি ও কাগজপত্রে সমস্যার অযুহাতে যান চালকদের কাছ থেকে গাড়ি প্রতিমাসে হাজার টাকাআদায় হয়। আদায়কৃত টাকার সবই যায় অফিসার ইনচার্জ, সার্জেন্ট ও হাবিলদারের পকেটে। হাবিলদার থেকে অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূক্তভোগী ড্রাইভার-হেলপার বলেন গাড়ীর কাগজপত্র ও মালামাল তল্লাশীর অজুহাতে গাড়ীপ্রতি তাদের ইচ্ছে মতচাঁদা আদায় করছে। আর কোন গাড়ির ড্রাইভার নির্ধারিত চাঁদা দিতে অস্বীকার করে তবে তার ওপর নেমে আসে নানা নির্যাতন। শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও পুলিশি যত ধারা-উপধারা আছে সব মিলিয়ে একটি মামলা দায়ের করে গাড়ীসহ ড্রাইভার-হেলপারকে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়।
হাইওয়ে পুলিশের ভাবটা এমন গাড়ির বৈধ-অবৈধতা তারা বুঝেনা। তারা শুধু বুঝে রাস্তায় গাড়ি চললে তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। ঈশ্বরদীর পাকশী হাইওয়ে পুলিশের অন্যতম প্রধান কাজ হলো প্রতিদিন নিয়মিত চাঁদা আদায় করা।
এছাড়াও মহাসড়কের উপর চলাচল করা নসিমন, করিমন, ইট টানাগাড়ী, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করার জন্য তাদের মাসিক চুক্তিতে দিতে হয় চাঁদা ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একজন ভুটভুটি চালক বলেন,আমি প্রতিমাসে ১০০০ টাকা করে চাঁদা দেই। অবশ্য এজন্য আমাকে বিশেষ ধরণের কার্ড দেওয়া হয়েছে যাতে পাকশী হাইওয়ে ফাঁড়ির আওতায় রাস্তায় কোন হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঝামেলা না করে।
একজন ষ্টিয়ারিং (কুত্তাগাড়ি) ড্রাইভারের সাথে কথা বলে যানা যায় , লক্ষীকুন্ডা, দাদাপুর, বিলকেদার, ভেড়ামারা ইট ভাটা থেকে ইট বোঝাই বিশেষ ধরনের কুত্তা গাড়ির ড্রাইভারদের কাছ থেকে মাসিকভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে হাইওয়ে পুলিশ। চাঁদা না দিলে আমাদের গাড়িগুলো ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
ঈশ্বরদীর রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প-লালনশাহ সেতুসংলগ্ন গোলচত্বর,পাবনা সুগার মিলের কাছে, নওদাপাড়া দোতলা মসজিদ সংলগ্নে, মুনানর মোড় জিয়া বিপণীর সংলগ্নে, দাশুড়িয়া নতুন ট্রাফিক মোড়ের কাছে ব্রীজ সংলগ্ন, মুলাডুলি ইক্ষু খামার সংলগ্ন শেখপাড়া-মুলাডুলি মহাসড়কে তারা যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন থামিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করছে ।
উল্লেখ্য,ইতোপূর্বে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পাকশী হাইওয়ে পুলিশের একজন সদস্য লালনশাহ সেতুসংলগ্ন এলাকায় যাত্রীবাহী নৈশ কোচের চাকায় পিষ্ট হয়ে নির্মম মৃত্যু হয়। মৃত্যুও তাদের চাঁদাবাজি থামাতে পারেনি। ক্ষণিকের জন্যেও থামেনি তাদের চাঁদাবাজি। বরং মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে দ্রæতগামী গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে পাকশী হাইওয়ে পুলিশ।
ঈশ্বরদীর হাইওয়েতে ইতোপূর্বে ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে অনেক। এদের মধ্যে দুই একটি মামলার আসামীকে পুলিশ আটক করতে পারলেও অধিকাংশ ডাকাতির ঘটনাই রয়েছে অন্তরালে। হাইওয়ে পুলিশ আর ডাকাতের লুকোচুরি খেলায় ঈশ্বরদী শেরশাহ রোডের সোহাগের মায়ের মত অনেক মা তার সন্তানকে হারিয়েছে। সম্প্রতি হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির বিভিন্নচিত্র এ সংবাদের প্রতিবেদক ও বিভিন্ন গণ্যমাধ্যম কর্মীগণের ক্যামেরায় বন্দি রয়েছে।
পাকশী হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহনের নিরাপত্তা বিধানের চেয়ে চাঁদা আদায়ের কাজে বেশি মনোযোগী।