মেগানিউজ রিপোর্টঃ অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করছেন। এই বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক ও কর কমানো হয়েছে। আবার অনেক পণ্যের শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বাজেটে যেসব শুল্ককর প্রস্তাব করা হয়, তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়।
বাজেটের কারণে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে-
দেশি ফ্রিজ-এসি: দেশের বাজারে যত ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়, তার ৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো যেমন দেশে ফ্রিজ উৎপাদন করছে, তেমনি বিদেশি ব্র্যান্ডের কারখানাও হয়েছে। দেশি তৈরি ফ্রিজে ভ্যাট আড়াই শতাংশ বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। দেশে ফ্রিজ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) উৎপাদনে ব্যবহৃত বিদেশি কম্প্রেসর ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। দেশে তৈরি এসির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
ফলে ফ্রিজ ও এসির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, কমপ্রেসর দেশেও তৈরি হয়।
সিগারেট: প্রতিবছর বাজেটে সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্যের ওপর শুল্ককর বাড়ানো হয়। এবারের বাজেটে সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। বাড়বে জর্দার দামও।
মোটরসাইকেল: ২৫০ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু পণ্যের বিপরীতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম বেশি পড়তে পারে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলের।
বিদেশি পানির ফিল্টার: ঢাকা ওয়াসার পানি পানযোগ্য নয়। তা অনেকে ফুটিয়ে পান করেন। অনেকে বাসায় পানি পরিশোধন যন্ত্র বা ফিল্টার বসিয়েছেন। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য বিদেশি পানির ফিল্টারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। ফলে দাম বাড়বে।
বৈদ্যুতিক বাতি: বৈদ্যুতিক বাতির মধ্যে এলইডি ও এনার্জি সেভিং বাতির উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির ভ্যাট। ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। একই হারে বেড়েছে টিউবলাইটের ভ্যাট। এতে বাতির দাম বাড়তে পারে।
বিদেশি মাছ: বিদেশ থেকে ম্যাকারেল নামের একটি সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এই মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফলে মাছটির দাম বাড়তে পারে। এই করভার সার্ডিন মাছের সমান করা হয়েছে।
পানীয়: মিষ্টি পানীয়ের দাম বাড়তে পারে বাজেটের পর। কারণ, বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজ বা কোমল পানীয়ের মতো মিষ্টি পানীয় কোম্পানির ওপর লেনদেন কর শূন্য দশমিক ৬ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোমল পানীয়ের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যান্য পানীয়ের ওপর বাড়ানো হয়েছে শুল্ক।
আমসত্ত্ব, ফলের রস, আইসক্রিম: আমসত্ত্ব ও ফলের রস স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
মুঠোফোনে কথা বলা ও সিম: মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এতে এই সেবায় মোট করভার দাঁড়াবে ৩৯ শতাংশের বেশি, যা কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়াবে। পাশাপাশি ই-সিম তুলতে সম্পূরক শুল্ক ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ফলে সিম কার্ড ও ই-সিম নেওয়ার খরচ বাড়বে।
চিকিৎসা ব্যয়: বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশেষ শুল্কছাড়ে চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে চিকিৎসাসেবা মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে হাসপাতালগুলো।
বিনোদন সেবা: বিনোদনকেন্দ্র, তথা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ভ্যাট দ্বিগুণ (১৫ শতাংশ) করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাড়তে পারে ঘোরাঘুরি ও বিনোদনের খরচ।
ইঞ্জিন অয়েল: বর্তমানে দেশে হাইব্রিড গাড়ি এবং আধুনিক প্রযুক্তির মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি পাচ্ছে। এতে সিনথেটিক লুব্রিকেটিং অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। এর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অনেক বেশি। তবে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন পর্যায়ে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত নেই। ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৫ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এর দাম বাড়তে পারে।
ইট: ইটে বিভিন্ন হারে কর বাড়ানো হয়েছে। এতে দাম বাড়তে পারে।
অন্যান্য: শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ককর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। কোনো শিল্পের কাঁচামালই আর শূন্য শুল্কে আমদানি করা যাবে না। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি সুইচ, সকেট, হোল্ডার ইত্যাদি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে দেশে মানসম্মত সুইচ ও সকেট উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ তৈরি সুইচ সকেটের ন্যূনতম আমদানি মূল্য প্রকৃত আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে কম। এতে স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সুইচ সকেটের যন্ত্রাংশ, সম্পূর্ণ সুইচ ও সম্পূর্ণ সকেটের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
সুইচ, সকেট ও হোল্ডার ইত্যাদি উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ৫ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ১ শতাংশ। তবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।