ঈশ্বরদীর বেনারসিপল্লি প্রকল্প: তাঁতিদের আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নিন

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

 

বিশেষ প্রতিবেদনঃ একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শক্ত হয় যখন তার স্থানীয় শিল্পের প্রসার ঘটে। এতে আমদানি বা পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয় না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বড় সংকটের জায়গা এখন সেটিই, আমরা অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি।  

 

দুঃখজনক হচ্ছে, পৃষ্ঠপোষকতা, আধুনিকায়ন ও কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি, বরং একসময়ের ব্যবসাসফল নানাবিধ তৈরি পণ্যের শিল্প এখন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। দক্ষ কারিগরেরাও বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

 

যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈশ্বরদী উপজেলায়। সেখানকার বেনারসিপল্লি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁতিরা। ২০ বছর আগে সেখানে বেনারসিপল্লি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এতে স্থানীয় তাঁতিদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।

 

দেশভাগের পর উত্তর ভারত থেকে আসা কয়েকজন বেনারসি কারিগরের হাত ধরে ঈশ্বরদীতে একাধিক তাঁতপাড়া গড়ে ওঠে। সেখানকার এই শিল্পের সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই বেনারসিশিল্পকে রক্ষা করতে ২০০৪ সালে সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী, দুই কোটি টাকার বেশি অর্থে ২০ বছর মেয়াদে একটি বেনারসিপল্লি গড়ে তোলা হয়। পাঁচ একর জমিতে ৯০টি প্লট তৈরি করে সেগুলো তাঁতিদের স্বল্প মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাত্র সাতটি কারখানা তৈরি করা হয়।

 

কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা না করায় তাঁতিদের আকৃষ্ট করতে পারেনি বেনারসিপল্লিটি। ফলে সাতটি ছাড়া বাকি প্লটগুলো আগাছায় ভরে গেছে। নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও। ফলে বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে পল্লিটি। তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তা ও তাঁতিদের বক্তব্য থেকে জানা গেল, তাঁতি সমিতির মাধ্যমে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়ায় আসল তাঁতিরা প্লট পাননি। ফলে প্রকৃত তাঁতিরা এখানে কারখানা করতে আগ্রহী হননি।

 

তাঁতিরাও সরকারি পল্লিতে না গিয়ে কষ্ট করে বাড়িতেই কাজ করছেন। পল্লি তৈরির সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বেনারসি শাড়ি তৈরির জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও বিক্রির ব্যবস্থাও করা হবে। এত বছরেও তার কিছুই করা হয়নি। সুতা প্রক্রিয়াকরণ একটি কারখানা করার কথা ছিল, সেটিও হয়নি। ফলে তাঁতিদের অধিক খরচে ঢাকা থেকে সুতা প্রক্রিয়া করে আনতে হচ্ছে।

 

বংশপরম্পরায় প্রায় ২০০ কারিগর এখনো তাঁতশিল্পের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কিন্তু ঈশ্বরদীর এ শিল্প রক্ষা করতে এসব কারিগরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।

 

অনেক সময়ক্ষেপণ হলেও বেনারসিপল্লিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি। অংশীজনের সঙ্গে বসে আলোচনা করে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।