(মন্তব্য প্রতিবেদন)
সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাসঃ
সাম্প্রতিক কালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সমুহ দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন সহ গনজাগরনের সৃষ্টি করেছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। বাস ধর্মঘট, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা, হুমকি ধামকি, হামলা সহ শত প্রতিকুলতা সত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীগন বাজারের ব্যাগে চিড়া মুড়ি নিয়ে পায়ে হেটে সমাবেশের দুই দিন আগেই সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে শীতের দিনে খোলা আকাশের নীচে রাত্রি যাপন করে সমাবেশ সফল করার ঘটনা নজীরবিহীন। সমাবেশের উপস্থিতি ছিল প্রতিটা এলাকাতেই স্মরনকালের বৃহত্তম জমায়েত। রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ এবং ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত উপস্থিত কর্মী সাধারনের প্রানের দাবী তাঁদের প্রানপ্রিয় নেত্রীর মুক্তি এবং গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের গগন বিদারী স্লোগান যেন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তরকে আলেড়িত করেছে। সাধারন মানুষ জীবন জীবিকা এবং গনতন্ত্রের স্বাদ পুনঃআস্বাদন করতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। একটার পর একটা জনসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি যেন জ্যামিতিক হারে বাড়ছেই। একমাত্র আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠনের ( ক্যাডার পলিটিক্সের) নেতাকর্মীদের পক্ষে এত ত্যাগ স্বীকার করে কর্মসুচী সফল করা সম্ভব ছিল। তাই বিএনপির মত একটি বহু শ্রেনী পেশার (মাল্টিক্লাস) সংগঠনের নেতা কর্মীদের দলীয় রাজনীতির আনুগত্য এবং আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ঘটনা আমাকে বিস্মিত করেছে। শুধু তাই নয় দলীয় নেতাকর্মী এবং জনগনের এই জাগরন এবং অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার শক্তি কারও আছে বলে মনে হয় না। রাজনীতির বিজ্ঞান সেই স্বাক্ষই দেয়। বলতে দ্বিধা নেই, এই গনজাগরন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার অনুসৃত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং উদারনৈতিক গনতন্ত্র ও উন্নয়নের রাজনীতির ক্যারিশমা বটে। অনুরুপ গনজাগরন ঘটিয়ে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া গনতন্ত্র প্রতিষ্টার জন্য এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে।
ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা, " আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না "। আধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার মাহথীর মহম্মদ তাঁর শাসনামলে তত্ব দিয়েছিলেন, " উন্নয়ন প্রধান, গনতন্ত্র অপ্রধান অর্থ্যাৎ সংকুচিত "। তিনি উন্নয়ন করেছিলেন বটে। তবে সে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট বা অর্থ পাচারের ঘটনা ছিল না। ছিল শুধুই নিখাদ উন্নয়ন। তারপরেও কয়েক দিন আগে নির্বাচনে মাহাতীর মহম্মদ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জামানত হারিয়েছেন। অর্থ্যাৎ গনতন্ত্র তাকে ক্ষমা করে নাই আবার জনগনও গনতন্ত্র হত্যার শাস্তি ঠিকই প্রদান করেছেন।
গন সমাবেশের গন জাগরনের হাওয়া ক্ষমতার মসনদকে তছনছ না করলেও নিঃসন্দেহে প্রকম্পিত করেছে। তাই শাষক লীগের নেতৃবৃন্দ " খেলা হবে, খেলা হবে " স্লোগান দিয়ে জনগনের গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন স্তব্ধ করতে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছেন। চৌদ্দ বছরের জুলুম নির্যাতন আর ভোট দিতে না পারার পঞ্জিভুত ক্ষোভে বিক্ষুব্ধ মানুষের পরিস্কার জবাব, " খেলা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার মত স্বচ্ছ কিংবা ক্যামেরুনের মত নোংরা যাই হউক না কেন তা রুখে দিয়ে জাগ্রত জনতা তাঁদের হৃত গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর "।
গনজাগরনের এই হাওয়া মাঠে ময়দানে অর্থ্যাৎ তৃনমুল বিএনপিকে নিঃসন্দেহে উদ্দেলিত করেছে। দীর্ঘ দিন নিষ্ক্রিয় থাকা বহু নেতা চলমান হাওয়ায় গা ভাসিয়ে মাঠে ময়দানে বিএনপির সংগঠন গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় শৃংখলা ভংগ করে হঠাৎ করে মাঠে নেমে কিছু কর্মী সংগ্রহ এবং সংগঠন গোছানোর উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে অনেক বিভ্রান্তির এবং সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। কারন তাঁদের অতীত কর্মকান্ড বিএনপির জন্য সুখকর ছিল না। জনমনে সন্দেহ, কারও দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে দল গোছানোর নামে দলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল সৃষ্টি করে এই দুর্দিনে তারা বিএনপিকে নতুন করে বিপর্যস্ত করবেন কিনা। সুকৌশলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষন করে ঐক্যের নামে মুল স্রোতধারায় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। ঈশ্বরদীর জনগন এই ঐক্য প্রক্রিয়ার বিপক্ষে নয় তবে তাঁদের জিজ্ঞাসা যে সমস্ত নেতা কর্মীগন দীর্ঘ ১৪ বছর সরকারের দমন পীড়ন এবং রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসুচী প্রতিপালন করতে যেয়ে নৃশংস হামলার স্বীকার এবং মামলার আসামী হয়ে জেল জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে এখন পর্যন্ত ঈশ্বরদীতে বিএনপির পতাকাকে সমুন্নত রেখেছে তারা কোথায়? ঐক্য প্রক্রিয়ায় তারা নাই কেন? দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সমস্ত নেতা কর্মীদের গায়ে কিন্তু বিএনপির পরিচয়টা পর্যন্ত নাই। তাদের অপরাধ তারা ক্ষমতাসীনদের সাথে আপোষরফা করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে নাই। তাদের অপরাধ তারা পার্টির রাজনীতির প্রতি অনুগত থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আদর্শকে বক্ষে ধারন করে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশ নেত্রী বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে সরব থেকে লড়াই করেছে। এটাও ঠিক তাদের কপালে বিএনপির তিলক না থাকলেও ঈশ্বরদীর মানুষ তাদেরকেই বিএনপির সাচ্চা কর্মী এবং শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক মনে করে। সুতরাং তাদেরকে অন্ধকারে রেখে যে কোন ঐক্য প্রক্রিয়া জনগনকে আস্থায় নেবে বলে মনে হয় না।
হ্যাঁ, আমি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুদ্দিন মালিথা এবং পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর মত কর্মী বান্ধব রাজপথে লড়াকু জিয়ার সৈনিকদের কথা বলছি। শামসুদ্দিন মালিথা বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার প্রথম নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক ছিলেন। জেনারেল জিয়ার আদর্শ মনে প্রানে গ্রহন করে সেই যে বিএনপির সাথে পথ চলা শুরু হয়েছে তা আজও নিরবিচ্ছিন্ন চলেছে। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক, সাধারন সম্পাদক এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর পর দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের আন্দোলন মুখর দিনে রাজপথে থেকে উপজেলা শাখার নেতৃত্ব দিয়েছেন। শামসুদ্দীন মালিথার আর্থিক বিনিয়োগ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের ২৬ শে নভেম্বরে বেগম জিয়ার উপস্থিতিতে দাশুড়িয়ার বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত করে বেগম জিয়ার আস্থাভাজন এবং স্নেহধন্য রাজনৈতিক কর্মীর স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। সেই জনসভায় ঈশ্বরদী বিএনপির কোন নেতার কি ভুমিকা ছিল তা আমার সেই জনসভায় ঈশ্বরদী বিএনপির কোন নেতার কি ভুমিকা ছিল তা আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। অথচ এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও ২০১৮ সালে নুন্যতম সাংগাঠনিক নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে, কোন রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে উপজেলা কমিটির বিলুপ্ত করা হল এবং এখন পর্যন্ত বিএনপিতে শামসুদ্দিনের সদস্যপদ নেই। তার অনুসারী ঈশ্বরদী উপজেলার শত শত নেতাকর্মী এ প্রশ্ন কাকে করবে এবং কে এর জবাব দিবে?
পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর কথা ঈশ্বরদীর গনমানুষের নিকট বললে তা মায়ের কাছে মাসীর গল্পের পুনরাবৃত্তি হবে। কিশোর বয়সে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন যৌবন জলাঞ্জলী দিয়ে বিএনপির পতাকা এবং রাজনীতিকে সমুন্নত রেখেছে। আমার জানামতে দীর্ঘ ১৪ বছরে কেন্দ্র ঘোষিত এমন কোন কর্মসুচী নাই যা পিন্টুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে প্রতিপালিত হয় নাই। মিথ্যা মামলায় ফাঁসীর দন্ডে দন্ডিত আসামী হিসাবে কারাগারের কনডেমড সেলে কি দুর্বিসহ জীবনযাপন করেছে। শুধু তাই নয় প্রায় দুই ডজন বিচারাধীন মিথ্যা মামলার খড়গ এখনও তার মাথার উপর। হাজার হাজার নেতা কর্মী যার মুক্তির দাবীতে প্রতি নিয়ত মিছিল মিটিং করছে। অথচ পিন্টুর মত একজন ত্যাগী নেতার বিএনপির সদস্যপদ নাই, মুল্যায়ন নাই এমন কি নুন্যতম স্বীকৃতিও নাই। রাজনীতিতে তার ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে এবং তা নিয়ে সমালোচনাও হতে পারে তাই বলে বিএনপিতে তার সদস্যপদ থাকবে না তা হতে পারে না বা ঈশ্বরদীর বিএনপি প্রেমিক জনগন তা মেনেও নেবে না।
আমার মনে হচ্ছে ঈশ্বরদীর তৃনমুলের নেতা কর্মী, সমর্থক, শুভ্যানুধায়ীগন সহ ব্যাপক জনগন মনে করেন আগামী দিনের আন্দোলন এবং নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ঐক্যের কোন বিকল্প নাই, তবে শুধু নেতায় নেতায় ঐক্য নয়, তৃনমুলে আন্দোলন, সংগ্রামরত ত্যাগী নেতা কর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে দলকে সুসংগঠিত এবং গতিশীল করার ঐক্যের পক্ষে। সে ঐক্য এখন বড় বেশী প্রয়োজন এবং সময়ের দাবীও বটে। তাই তৃনমুলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে বহত্তর ঐক্য গড়ার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং জেলার দাযিত্বশীল নেতাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
লেখকঃ-কলামিষ্ট এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সেলঃ-০১৭১৩৭৪৩৭৫৬।
মেইলঃ mb3292279@gmail.com