ঈশ্বরদী ইপিজেডে প্রতি বছর বাড়ছে রপ্তানি আয়

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২


মেগানিউজ রিপোর্টঃ ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে ৩০৮ দশমিক ৯৭ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (আইইপিজেড)। ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে রপ্তানিলব্ধ অর্থের পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে।

 

২০২১-২০২২ অর্থবছরে ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে মোট ২০৯ দশমিক ০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়।

 

এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৩১ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫০ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫৯ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০৯ দশমিক ০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগের বছরগুলোর তুলনায় গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

 

স্বল্প মূল্যে শ্রমিক সুবিধা, রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় স্থান পায় ঈশ্বরদী ইপিজেড। বাড়তে থাকে কারখানার সংখ্যা ও পণ্য উৎপাদন।

 

সুযোগ-সুবিধা আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির কারণে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ঈশ্বরদী ইপিজেড শিল্প-কারখানা স্থাপনে উপযুক্ত স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার কারখানাগুলোতে তৈরি সামগ্রীও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।


রপ্তানিলব্ধ অর্থের পরিমাণের দিক থেকে ঈশ্বরদী ইপিজেডের অবস্থান ভালো। রপ্তানি বিবেচনায় দেশের আটটি ইপিজেডের মধ্যে এ ইপিজেডের অবস্থান সপ্তম। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ঈশ্বরদী ইপিজেডে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ২১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ইপিজেডে সমস্ত প্লটই ইতোমধ্যে চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের মাঝে বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত নতুন দুটি কারখানা ঈশ্বরদী ইপিজেডে চালু হয়েছে। দেশি কোম্পানি ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানি এই ইপিজেডে তাদের কারখানা গড়ে তুলেছে।

 

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ২৭৮ জন। এর মধ্যে নারী ১১ হাজার ৮৫৪ ও পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৪ জন। এখানে অর্ধ শতাধিক বিদেশি নাগরিকও কর্মরত রয়েছেন। এখানে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী ইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিজস্ব একটি সাব- স্টেশন আছে। পানি ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাও শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যাটারি, প্রক্রিয়াজাত প্লাস্টিক, অ্যাগলোমারেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, প্লেইন পলি, রেডিমেট গার্মেন্ট, ক্রাফট, হেয়ার, ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল গ্রেবস, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও অন্যান্য বায়োকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে ঈশ্বরদী ইপিজেডের কারখানাগুলোতে।

 

বেপজা জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বেপজার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি কারখানা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা সদস্য নিযুক্ত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া পুরো জোন ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছে। বেপজা কর্তৃক কারখানাগুলো নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডের রপ্তানির সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক ও সংশ্লিষ্ট খাত থেকে। গত অর্থবছরে ঈশ্বরদী ইপিজেডে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সার্বিক বিবেচনায় ইপিজেডের বর্তমান অবস্থা ভাল। আগামী বছরগুলোতে রপ্তানির অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

 

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ইপিজেডের কারণে ঈশ্বরদী উপজেলা সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রসর একটি উপজেলা। দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলা থেকে বের হয়ে আসা উপজেলার মধ্যে ঈশ্বরদী অন্যতম। প্রায় ১৬ হাজার মানুষ ইপিজেডে কাজ করে। যার বেশিরভাগই মেয়ে। এখানকার মানুষেরা কর্মব্যস্ত বেশি। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, পারিবারিক কলহ কমেছে। সবদিক বিবেচনা করলে ঈশ্বরদীর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ইপিজেড।

 

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ঈশ্বরদী ইপিজেডের কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালের ১৩ জানুয়ারি এই ইপিজেডের উদ্বোধন হওয়ার পর শুরু হয় পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি।