দেশে করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহের জন্য এগিয়ে এসেছে দেশের খ্যাতনামা ৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানের অনুরোধ ও আহবানে সাড়া দিয়ে ওই ৪টি প্রতিষ্ঠান ও নারায়ণগঞ্জ ক্লিনিক মালিক সমিতি নমুনা সংগ্রহের টিম ছাড়াও প্রস্তুত রেখেছে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স।
ফলে নারায়ণগঞ্জ থেকে এখন দ্রুত সময়ের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ওই চারটি ডায়াগনিস্টক সেন্টারের কর্মাধ্যক্ষ ও স্থানীয় ক্লিনিক মালিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এর উদ্যোক্তা এমপি শামীম ওসমান।
শুক্রবার দুপুরে শামীম ওসমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের প্রতি নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছিলেন শামীম ওসমান।
ফলে পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার আহবানে সাড়া দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করছেন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কর্মকর্তারা। এদিকে মানুষকে ঘরে রাখতে এবার গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন শামীম ওসমান।
তিনি বলেছেন, কারফিউ দিয়েও লাভ হবে না। কারণ কারফিউ দিলে তো সেনাবাহিনীই নামবে। সেনাবাহিনী তো মাঠে আছেই, র্যাব-পুলিশ-বিজিবিও মাঠে।
তারা একদিক দিয়ে টহল দিয়ে যাচ্ছে, আরেক দিক দিয়ে মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে। লাঠি না নিয়ে নামলে মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৩নং ওয়ার্ডের করোয়ায় আক্রান্ত এক চিকিৎসাধীন ব্যক্তির স্ত্রী ৪দিন কেঁদেও সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে তার নমুনাটি সংগ্রহ করাতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা মালিক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক নেতা আরিফ আলম দীপু ৩দিন ধরে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে বার বার কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাকুতি মিনতি করলেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
ফলে এতেই প্রতীয়মান একজন সম্পাদক, সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের নেতার যখন এ অবস্থা তখন সাধারণ মানুষের কী হচ্ছে। ওই ২ জনের নমুনাই শেষ পর্যন্ত সিভিল সার্জন অফিস থেকে নিয়ে গেছে।
সে কারণেই আমি দ্রুত ল্যাব স্থাপনের কথা বলেছি। ইতোমধ্যে আমি ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেশের সবচেয়ে বড় চারটি ডায়াগনস্টিক ল্যাবএইড, মডার্ন, মেডিনোভা ও পপুলারের শাখা রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।
তাদের কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা সম্মতি প্রদান করে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। তাছাড়া ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ ও মেডিস্টার ক্লিনিকের মালিক মিন্টু ২টি এম্বুলেন্স প্রস্তুত করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
এ চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ ও ক্লিনিক মালিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এমপি শামীম ওসমান বলেন, এ দুর্যোগময় মুহূর্তে যে তারা এগিয়ে এসেছে সেটা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। আশা করি এখন আর স্যাস্পল কালেকশনে সমস্যা হবে না।
শামীম ওসমান গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্যোগের এই সময়ে যথেষ্ট ভুমিকা রাখছেন, আমি সাংবাদিক সমাজের প্রতি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনারা বিষয়গুলো তুলে ধরছেন বিধায় আমরা জানতে পারছি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, পঞ্চায়েতকে নিয়ে এলাকায় এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা ৮-১০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে টিম করে মাঠে নামাবো।
কমিটিতে যারা থাকবে তাদের একটা আইডি কার্ড প্রশাসনের কাছে থাকবে। যাতে এই সুযোগে অন্য কেউ বদমাশি করতে না পারে। তাদের কাজ শুধু পাড়া মহল্লায় মানুষকে ঘর থেকে বের হতে বারণ করা এবং বের হলে যে কোন উপায়ে তাকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া।
আর কমিটিগুলোতে স্ব স্ব এলাকায় সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে পারেন। তাই আমি নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক সমাজের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত যদি আমাকে জানান তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি এবং তাদের ঘরে থাকতে বাধ্য করতে স্বেচ্ছাসেবী নামাবো।
এছাড়া মানুষকে ঘরে রাখা কোনভাবেই সম্ভব না। প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, সব লোকাল এবং জাতীয় গণমাধ্যমের কাছে আমার প্রশ্ন- এই সময় আমার কী করণীয়?
যদি করণীয় হয়ে থাকে সেখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে মিডিয়ার অংশগ্রহণ থাকবে কি না? কারণ এখানে যখন বল প্রয়োগ হবে, শক্ত আচরণ হবে, এটা নিয়ে যদি কেউ নেগেটিভ নিউজ প্রকাশ করে দেন তাহলে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে। সেই কারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহন প্রয়োজন।
খাবার নিয়ে মানুষকে চিন্তা না করার অনুরোধ জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমরা দুই ভাই (শামীম ওসমান-সেলিম ওসমান) যদি মানুষের কাছে হাত পাতি- নিজেরা তো দিবোই, আরও ৫-১০ কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়া কোন ব্যাপারই না।
এই টাকা দিয়ে আমরা মানুষকে খাওয়াতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। তবে মুরগীর মাংস খাওয়াতে পারবো না। তবে ডাল-ভাত তো খাওয়াতে পারবো।
দুনিয়াতে ভালো মানুষের সংখ্যা একেবারে কম না। কিন্তু উদ্যোগ তো নিতে হবে। যেমন দ্রুত স্যাম্পল কালেকশনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি ঠিকই সবাই এগিয়ে এসেছে।